কয়লা কেলেঙ্কারিতে কার নাম নেওয়ায় খুন রাজু ঝা?
তিনি মুখ খুললেই বিপদ। একথা বুঝেই কি খুন করা হল ব্যবসায়ী রাজু ঝা (Raju Jha) কে? হত্যার (murder) পর থেকে একের পর এক ঘটনা যেভাবে সামনে আসছে, তাতে স্পষ্ট, পুরোটাই পূর্ব পরিকল্পিত। আর যেভাবে এই খুন করা হয়েছে, তা যে কোনও থ্রিলার কাহিনীকেও হার মানাবে। ঘটনার দিন যিনি গাড়ি চালাচ্ছিলেন, সেই শেখ নূরের বয়ান নথিবদ্ধ করেছে পুলিশ। সেখান থেকেই জানা যাচ্ছে, রাজু ঝার সঙ্গে এক গাড়িতে উঠেছিলেন আব্দুল লতিফ (Abdul latiph)। কে এই আব্দুল লতিফ? তিনি বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mondal) ঘনিষ্ঠ। গরু পাচার কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত। পুলিশের খাতায় আব্দুল লতিফ ফেরার। এই আব্দুল লতিফের বাড়ি বীরভূমের ইলামবাজারে। বীরভূমের ইলামবাজারের গরুর হাট থেকে বাংলাদেশে কনটেনারে করে গরু পাচার হতো। বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত এই গরু পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল লতিফের ওপর। গরু পাচারকারী এনামুল হকের অন্যতম সঙ্গী ছিল লতিফ। অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই আব্দুল লতিফের খোঁজে তল্লাশি চালায় সিবিআই আধিকারিকরা। তল্লাশি চলে তার বাড়ি থেকে মার্বেলের দোকানে। কিন্তু কোথাও হদিশ মেলেনি। পুলিশও ছিল নির্বাক দর্শক। সেই আব্দুল লতিফকেই ইলামবাজারের বাড়ি থেকে শনিবার গাড়িতে তোলে চালক শেখ নূর। গত ৫ বছর ধরে প্রতিদিনই সে লতিফের বাড়ি যাচ্ছে, গাড়ি চালাচ্ছে। শনিবার গাড়ি নিয়ে তারা প্রথমে যায় দুর্গাপুর। ভিড়িঙ্গি মোড় থেকে গাড়িতে তোলা হয় ব্রতীনকে। এরপর গাড়ি পৌঁছয় দুর্গাপুরে রাজু ঝার হোটেলে। সন্ধে ৬টা ১০ নাগাদ রাজু, ব্রতীন ও লতিফ বের হন। কলকাতার দিকে গাড়ি ছোটায় শেখ নূর। শক্তিগড়ে এসে গাড়ি দাঁড়ায় ল্যাংচা মহলে। সেখানে চালকের পাশের সিটে তখন বসে রাজু ঝা। বাকিরা নেমে ঝালমুড়ি খায়। ব্রতিন গাড়িতে উঠে। শেখ নূরের দাবি, ব্রতীনের কথা মতো সে পান পরাগ কিনতে যায়। শৌচাগারে যান আব্দুল লতিফ। এসময়ই নীল গাড়ি করে এসে রাজু ঝাকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। গুলি লাগে ব্রতীনেরও। ঘটনার পর ওই গাড়ি করেই বর্ধমানে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় রাজুকে। সেখানেই তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। চিকিৎসা চলে ব্রতীনের। কিন্তু দেখা মেলে না অনুব্রত ঘনিষ্ঠ লতিফের। তখন থেকেই তিনি উধাও। তাই রহস্য আরো ঘনীভূত হয়েছে। জানা যাচ্ছে, সোমবারই দিল্লিতে রাজু ঝাকে তলব করেছিল ইডি। এর আগে সিবিআই তাঁকে জেরা করেছে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, ইডির কাছে বয়ান দেওয়ার আগেই কি পরিকল্পনা করে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হল? কাজে লাগানো হল ভাড়াটে শার্প শ্যুটারদের? দুদিন আগেই এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। তিনি দাবি করেছিলেন, মুখ বন্ধ করতেই কয়লা ব্যবসায়ী রাজু ঝাকে খুন করা হয়েছে! কয়লাকাণ্ডে সিবিআইয়ের দফতরে হাজিরা দিয়ে রাজু হয়তো বড় নাম বলে এসেছিলেন। তাই তাঁর মুখ বন্ধ করা হয়েছে। তাই প্রশ্ন উঠছে, কয়লা কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত কার নাম বলাতে খুন হতে হল রাজু ঝাকে? একদিকে গরু পাচার, অন্যদিকে কয়লা কেলেঙ্কারি। দুয়ের যাঁতাকলে এখন তিহাড় জেলে দিন কাটাচ্ছেন অনুব্রত মণ্ডল। দুর্নীতির মাথায় পৌঁছতে জেরার পর জেরা চালিয়ে যাচ্ছেন গোয়েন্দারা। কিন্তু এরমধ্যেই খুন হতে হল ব্যবসায়ী রাজু ঝাকে। যা আরও অনেক প্রশ্ন সামনে এনে দিল।