উপাচার্য নিয়োগেও বেনিয়ম?
রাজ্যে শিক্ষায় দুর্নীতিতে কি ষোলকলা পূর্ণ হল? প্রশ্নটা উঠছে সম্প্রতি হাইকোর্টের এক রায়ে। কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়ে দিল, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে সোনালি চক্রবর্তীর নিয়োগ বেআইনি। এভাবে উপাচার্য নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে পারে না রাজ্য। স্পষ্ট বুঝিয়ে দিল আদালত। আর সেই সঙ্গেই স্পষ্ট হয়ে গেল, রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থায় একেবারে প্রাইমারি লেভেলে নিয়োগ দুর্নীতি থেকে শিক্ষার সর্বোচ্চ পর্যায়েও দুর্নীতি করতে কসুর করেনি রাজ্য। এই লজ্জার দায়ভার নিয়ে কি নিজের ভুল স্বীকার করবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী? শিক্ষা মহলেই এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
গত বছর ২৭ আগস্ট সোনালি চক্রবর্তীকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে পুনর্বহালের বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্য সরকার। এ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। সেখানে বলা হয়, আচার্যকে এড়িয়ে উপাচার্য নিয়োগ অসাংবিধানিক। কিন্তু সবকিছু জেনেশুনেই ওই পদে সোনালি চক্রবর্তীকে বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। শিক্ষক মহলের খবর, নিজের গোঁ বজায় রাখতে এই সিদ্ধান্তে সিলমোহর দেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যপালকে এড়িয়েই তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করেন। যা পুরোপুরি আইন বিরুদ্ধ।
এই মামলার রায় দিতে গিয়েই সোনালি চক্রবর্তীর পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত খারিজ করে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। আসলে, যে বিজ্ঞপ্তি জারি করে উপাচার্য পদে বসানো হয়েছিল সোনালি চক্রবর্তীকে, সেই বিজ্ঞপ্তিই খারিজ করে দিয়েছে প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ। সরকারের লজ্জা বাড়িয়ে আদালত জানিয়ে দিয়েছে, এভাবে উপাচার্য নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে পারে না রাজ্য। আদালতের এই রায়ে ঝড় উঠেছে রাজনৈতিক মহলে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর মতে, সরকারের সিদ্ধান্ত খারিজ করা মানে সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতাই খারিজ হয়ে যাওয়া। সরকার যে শিক্ষা ব্যবস্থা ঠিকঠাক চালাতে পুরোপুরি ব্যর্থ, আদালতের পর্যবেক্ষণই তার বড় প্রমাণ। অধীর বলেন, এরাজ্যে দক্ষতার স্থান নেই, স্থান আছে শুধু বশ্য়তার।
বশ্যতার কথা কেন সামনে আসছে, তার যুক্তিও তুলে ধরছেন অনেকে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডিলিট দিয়েছিলেন এই সোনালি চক্রবর্তী। ইনি আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী, যিনি কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের পর রাজ্য সরকারের পরামর্শদাতা পদে বহাল। ফলে শিক্ষায় নিয়োগ মানেই যে স্বজনপোষণ, তা দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তরে এই নিয়ম বহির্ভূত নিয়োগের আগে সর্বস্তরেই এই বেনিয়ম দেখা গেছে। আদালতেই স্পষ্ট হয়েছে টেট দুর্নীতি, এসএসসি দুর্নীতি থেকে কলেজে শিক্ষক নিয়োগের মতো ঘটনা। পার্থ চট্টোপাধ্যায় যখন শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন, তখন টাকার বিনিময়ে কীভাবে চাকরি দেওয়া হয়েছে, তার বহু নিদর্শন সামনে এসেছে। ইডির তল্লাশিতে কোটি কোটি টাকা এরমধ্যে উদ্ধারও হয়েছে। বেআইনি নিয়োগে চাকরি গেছে মন্ত্রী কন্যার। পরীক্ষায় পাশ করেও চাকরির জন্য বসে আছে বহু ক্যান্ডিডেট। দিনের পর দিন নিজেদের ন্যায্য দাবিতে তারা আন্দোলন করে গেছে। কিন্তু সেদিকে তাকানোরও প্রয়োজন মনে করেননি মুখ্য়মন্ত্রী। বরং তাঁর চোখের সামনে যেভাবে দিনের পর দিন দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে, তা রাজ্যকে গোটা দেশের কাছে লজ্জায় ফেলে দিয়েছে। শিক্ষায় নিয়োগে একেবারে নিচের স্তরে নিয়োগ দুর্নীতি সামনে আসার পর এবার একেবারে সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিয়োগেও ধাক্কা। লজ্জায় মাথানত হলেও তাতে আমল দিতে নারাজ রাজ্য সরকার। সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে সেই লজ্জা নিবারণের উপায় খুঁজছে তারা। কিন্তু এভাবে কি মুখ লুকনো সম্ভব? প্রশ্ন তুলছে রাজ্যবাসী।
Tags: