১০০ দিনের কাজে রায়গঞ্জে লোপাট গাছ লাগানোর টাকা
এই যে সামনে সোজা গ্রাম-ছাড়া-ঐ-রাঙা-মাটির-পথটি দেখতে পাচ্ছেন ওখানে বাইশ লক্ষ টাকার গাছ লাগানো আছে। কি হল দেখতে পাচ্ছেন নাহ? না দেখতে পেলে সে আপনার চোখের ভুল। মন দিয়ে দেখুন, এইখানেই কমবেশি এক লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। কি? তাও চোখে পড়ছে নাহ? তাহলে এবার আপনাকে চোখের ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। কারণ ২০২০-২১ অর্থবর্ষে, একশ দিনের কাজের প্রকল্পে, রায়গঞ্জের শীতগ্রাম পঞ্চায়েতে গাছ পিছু পনের টাকা খরচ করে এক লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার গাছ লাগানো হয়। ২০২২-এর বর্ষায় গাছগুলোর বড় হয়ে যাওয়ার কথা ছিল! আপনিও দেখতে পাননি। আমরাও পাইনি। আপনার মত আমরাও ভেবেছিলাম, চোখের ভুল নয়তো। একই কথা ভেবেছিলেন রায়গঞ্জ ব্লকের শীতগ্রাম পঞ্চায়েতে বাসিন্দারাও। মোদ্দা কথা, মনরেগা কাজের অংশ হিসেবে, শীতগ্রাম পঞ্চায়েতের সব গ্রামে, রাস্তার দুধারে, গড়ে আটশ' থেকে হাজারটা করে গাছ লাগানো হয়েছিল। গাছ লাগাতে লোকেরা এসেছিল। চলেও গেছিল। সব জায়গায় গাছ আর লাগানো হয়নি। এরপর আসে গাছ রক্ষণাবেক্ষণের প্রশ্ন। যেখানে গাছ লাগেইনি। সেখানে রক্ষণাবেক্ষণ কিসের? তাই শ্রমিক আসেনি। আর যেখানে গাছ লাগানো হয়েছিল, সেখানেও কষ্ট করে রক্ষণাবেক্ষণের লোক হয়নি। এসব বলছেন গ্রামের মানুষরাই। কারণ তারাই প্রত্যক্ষদর্শী। সরকারি ওয়েবসাইটের সঙ্গে প্রত্যক্ষদর্শীদের কথার ফারাক বুঝতে পারছেন? যদিও স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যদের দাবি, গাছ লাগানোর কিছুদিনের মধ্যেই প্রাকৃতিক দুর্যোগে আর গবাদি পশুদের তাড়নায় সব গাছ নাকি উধাও হয়ে গেছে। কি স্যার? বাড়ির মেয়ে বৌটাকে মিথ্যাবাদী বানিয়ে দিলেন? নাকি তাঁদের নাম করে আপনারাই এই লুঠতরাজ চালান? তাহলে শুনুন, ২০২০-২১ থেকে ২০২২-২৩। এই দুই অর্থবর্ষে, রায়গঞ্জে এমন কোন ঝড় ঝঞ্ঝা বন্যা খরা অগ্ন্যুৎপাত এমন কিচ্ছু ঘটেনি। তাহলে গাছ গুলো সব কোথায় গেল? কোথায় গেল মাস্টাররোলের টাকা? সরকারি ওয়েবসাইটে অঞ্চলের নাম, গাছের সংখ্যা, শ্রমিকের জব কার্ড, মাস্টাররোল সবই যথাযথ আছে। শুধু গাছগুলো নেই। নেই মানে নেই। ভ্যানিস। যেমন ভ্যানিস গাছ লাগানো আর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য খরচ হওয়া বাইশ লক্ষ টাকা! উপপ্রধান নবকান্ত বর্মন অবশ্য ক্যামেরার সামনে স্বীকার করলেন। গাছের টাকা মেরে দেওয়ার অভিযোগ সত্য। তবে তিনি আংশিক সহমত। এখনও তার দাবি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই গাছ নষ্ট হয়েছে। সরকারি নথিতেই বলা আছে,সবচেয়ে বেশি ১০ থেকে ২০শতাংশ গাছ নষ্ট হতে পারে। বাকি আশি শতাংশ গাছগুলোতো সটান খাড়া থাকবে মাটির ওপর। এক লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার গাছের একটাও চোখে পড়ছে না কেন? এই ভাবেই শুধু গাছের টাকা নয়, গ্রামের মানুষের পরিশ্রমের টাকাও লুঠ হয়ে যাচ্ছে তৃণমূলের পঞ্চায়েতের হাতে। কারণ গ্রামের মানুষের হাতে কাজ দিতেই ১০০দিনের কাজের প্রকল্প। মনরেগা মানে অন্য এলাকার শ্রমিক এনে কাজ করানো নয়। শীতগ্রাম পঞ্চায়েতের ছেলে মেয়েদেরই বৃক্ষরোপনের কাজ করার কথা। টাকাটাও তাদেরই পাওয়ার কথা। রক্ষণাবেক্ষণও তাঁদের করার কথা। বাইরে থেকে নয়। শীতগ্রাম পঞ্চায়েতের লোকজন এখন সুকুমার পড়ছেন, আর বলছেন, ছিল গাছ, হয়ে গেল ধু ধু প্রান্তর!