চুরি থেকে চোখ ঘোরাতেই অভিষেকের সংযোগ যাত্রা?
কথায় বলে ঠেলার নাম বাবাজি। ঠেলায় পড়েই কি এবার জেলা সফরে ঘুরতে বেরোচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়? পঞ্চায়েত ভোটের দিকে তাকিয়ে এর আগেই দুয়ারে সরকার কর্মসূচি চালু করেছিল মমতা সরকার। চালু হয়েছিল, দিদির দূত কর্মসূচি। কিন্তু সেগুলো কার্যত ফ্লপ হয়েছে। দিদির দূত কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে নেতা, বিধায়ক থেকে সাংসদ, সকলকেই আমজনতার প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। কোথাও কোথাও এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যে জনপ্রতিনিধিদের ধৈর্য হারাতেও দেখা যায়। বিরোধীরা কটাক্ষ করে এই কর্মসূচির নাম দেন, দিদির ভূত। কোথাও রাস্তা নেই, কোথাও জল নেই, একরাশ নেই রাজ্যের মধ্যে আচমকা শাসক দলের প্রতিনিধিদের পেয়ে ক্ষোভ উগরে দেন আমজনতা। সরকারের প্রচেষ্টা বিফলে যাওয়াতেই কি চিন্তায় তৃণমূল নেতৃত্ব? পঞ্চায়েত ভোটের আগে পায়ের নীচের মাটি সরে গেছে বুঝতে পেরেই কি এবার জনসংযোগ যাত্রার পথে অভিষেক? জনতা দল থেকে মুখ ফিরিয়েছে বুঝতে পেরেই কি তাঁকে জনসংযোগের নাম দিতে হচ্ছে, তৃণমূলে জনজোয়ার?
টানা দু মাস চলবে এই কর্মসূচি। একেবারে উত্তর বঙ্গের কোচবিহার থেকে দক্ষিণবঙ্গের কাকদ্বীপ। উত্তরবঙ্গের ভিত আগেই টলে গেছে তৃণমূল কংগ্রেসের। একের পর এক দুর্নীতির ধাক্কায় এখন রাজ্য জুড়েই ত্রাহি রব শাসক শিবিরে। রাস্তা ঘাটেই শোনা যাচ্ছে ছিছিক্কার। উঠছে চোর চোর রব। চাকরি চুরির দায়ে এরমধ্যেই তিন বিধায়ক জেলে। লাইনে আছেন আরও অনেকে। গরু পাচারের দায়ে তিহার জেলে বন্দি অনুব্রত মণ্ডল। ফলে জনগণের সামনে মুখ দেখানোই দায় হয়ে পড়েছে জনপ্রতিনিধিদের। সেই বিপদ আঁচ করেছেন খোদ তৃণমূল নেত্রী। রাজনীতিতে ভাইপো অপরিণত বুঝতে পেরেই কি তাঁকে ঠান্ডা ঘরের রাজনীতি থেকে পথের রাজনীতিতে নামিয়ে দিচ্ছেন?
তৃণমূলের এই কর্মসূচির পিছনে অনেকে অন্য পরিকল্পনা দেখছেন। বিরোধীদের অভিযোগ, যে টাকা দেবে, তাকেই টিকিট দেওয়া হবে। সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে কালীঘাটে। সেই পথ পরিষ্কার করতেই এখন গোপন ব্যালটের ছক। কেউ জানবে না, কাকে টিকিট দেওয়া হবে। পুরোটাই ঠিক করবেন অভিষেক। তিনি বলছেন, কে কাকে ভোট দিচ্ছে, তা কেউ জানবে না। মানে, আধুনিক ম্যানেজমেন্ট ট্যাকটিক্স। কোম্পানির মাথার জানেন, কাকে কোন পদে বসানো হবে। কিন্তু কর্মীদের আস্থা বজায় রাখতে নেওয়া হয় গোপন ভোট। ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত আগে থেকেই চূড়ান্ত থাকে সেখানে। বাকিটা কর্মীদের চোখে ধুলো দেওয়ার কৌশল। দলের সঙ্গীন অবস্থায় ম্যানেজমেন্ট পড়ুয়া অভিষেক এবার সেই কৌশল বেছে নিচ্ছেন না তো? এতে তাঁর দুটি কাজ হাসিল হবে। এক, ঘুর পথে টাকা আসবে কালীঘাটে। যে টাকা তোলার পথ বাধা পাচ্ছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা তৎপরতায়। অন্যদিকে, এলাকার মানুষের কাছে নেতৃত্বের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার চেষ্টা হবে। নেতৃত্ব বলতে পারবে, তৃণমল স্তরের কর্মীরা যাঁকে ভোট দিয়েছেন, তিনিই টিকিট পেয়েছেন। দলের তরি যখন ডুবতে বসেছ, তখন এই কৌশলকে হাতিয়ার করেই ভেসে থাকার চেষ্টা করছে কালীঘাট।