দিনে দুপুরে আসানসোলে জমি মাফিয়ার দৌরাত্ম্য, চলল গুলি
ঠিক সিনেমার মত। বাগী বন্দুক আর জমি দখলের গল্প। এই গল্প আসানসোলের। আসানসোলের কালিপাহাড়ি কেশবগঞ্জ এলাকার আদিবাসী পাড়ায় জমি দখলে চলল গুলি।
আসানসোল পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে বেশ কয়েক বিঘা দেবোত্তর সম্পত্তি রয়েছে। নুনিয়া নদীর চরের পাশে বিশাল এলাকা। কিছু দূরেই ২ নম্বর জাতীয় সড়ক। জমির অবস্থান পুরসভা পঞ্চায়েতের সীমানায়। ফলে সোনার থেকেও বেশি দামি এই কয়েক বিঘা দেবোত্তর সম্পত্তি।
অথচ দীর্ঘ তিরিশ চল্লিশ বছর ওই জমিতে চাষ করেন স্থানীয় আদিবাসি বাউড়িরা। ওইটুকুই রোজগার। গ্রামবাসীদের অভিযোগ বেশ কিছুদিন ধরেই ওই জমিতে, চোখ পড়েছে জমি মাফিয়াদের। নকল দলিল বানিয়ে ওই জমি দখল করার চেষ্টাও চলছিল। আদিবাসী গ্রামবাসীরা বাধা দেওয়ায় এতদিন কিছু করতে পারেনি। অভিযোগ গত মঙ্গলবার ফের জমির দখল নিতে এলে বাধা দেন মহিলারা। তখনই মরিয়া হয়ে গুলি চালায়। প্রথমে আগ্নেয়াস্ত্র বের করে ভয় দেখালেও অনড় আদিবাসিদের সরাতে পারেনি। তারপরই গ্রামবাসীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ। ততক্ষণে অবশ্য পালিয়েছে জমি দুষ্কৃতিরা। যদিও গ্রামবাসীরা চিনতে পেরেছেন তাদের।
ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীদের বক্তব্য, দীর্ঘদিন ওই দেবোত্তরের সম্পত্তিতে তারা চাষ করেন। নতুন বোর্ড হওয়ার পর থেকেই জমি মাফিয়াদের আনাগোনা বেড়েছে। মঙ্গলবারের ঘটনা সীমা ছাড়িয়েছে।
বুধবার ঘটনাস্থলে যান আসানসোল পুরনিগমের কাউন্সিলর ঋণা মুখোপাধ্যায়ও। জানিয়েছেন আগের দিন খবর পেলেও আসতে পারেনি পুরনিগমে বৈঠক থাকায়।
বোঝা গেল কাউন্সিলর চেনেন এই হামলাকারীদের। তাদের প্রতি সহানুভূতিশীলও বটে। তবে প্রথমে এই কথা বললেও কিছুক্ষণ পরেই জানাচ্ছেন, তাঁর কাছেও গেছিলেন কেউ। যারা নিজেদের জমির মালিক বলে দাবি করেছেন। দলিলও দেখিয়েছেন। তারপর কাউন্সিলর একটা আপোষের শর্ত দিয়েছিলেন। জমির দখল তারা পাবেন। বদলে আদিবাসীরা মাথার ওপর ঘর পাবেন। সেই শর্তও সম্ভবত মানতে চাননি জমি মাফিয়াদের মাথা। তারপরেই এই কাণ্ড!
আরেকবার শুনুন। ঠিক কি বলছেন কাউন্সিলর? তাঁর কাছে কেউ এসেছিলেন জমি দাবি নিয়ে। আবার তিনিই জানিয়েছেন যারা চাষ করতেন তাদের চিঠিও লিখে দিয়েছেন তিনি।
কিন্তু দেবোত্তরের জমি তো হস্তান্তর হয় না। দানপত্র বিক্রি কিছুই করা নয়। শুধু ওই জমির আয় থেকে দেবতার পুজো আচ্চা চলতে পারে। বিধায়ক মলয় ঘটকের বিধানসভা এলাকা। তিনিও জানেন সবকিছু।
অভিযুক্ত শম্ভু সিং-এর বিরুদ্ধে এর আগেও অনেক অভিযোগ জমা পড়েছে। এলাকায় জমি হাঙর বলে পরিচিত এই শম্ভু। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ সেই বাউড়ি পাড়ার বেপরোয়া বেকার যুবকদের হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছেন। একা বিবেক বাউড়িকে দোষ দিয়ে কি লাভ। ধরতে হলে ধরতে হবে মাথাদের।