Dengue: ডেঙ্গি মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা অব্যাহত, মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে বাড়ল বিতর্ক 

Dengue: বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, এ বছর ডেঙ্গিতে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
dengue
dengue

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ডেঙ্গি নিয়ে রাজ্যের লুকোচুরির রোগ যেন কিছুতেই সারছে না। ডেঙ্গি আক্রান্ত আর ডেঙ্গি মৃত্যুর সংখ্যা সরকারি হিসাবে যেন বিস্তর গোলমাল। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, রাজ্য সরকারের তথ্য গোপনের রোগ মুক্তি না ঘটলে, রাজ্যবাসীর ডেঙ্গি থেকে রেহাই পাওয়া মুশকিল। 

বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, এ বছর ডেঙ্গিতে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর তাতেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। চলতি বছরে একাধিকবার স্বাস্থ্য দফতর ও কলকাতা পুরসভার রিপোর্ট ডেঙ্গি আক্রান্তের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে কমবেশি ৮০ জন মারা গিয়েছেন। কিন্তু বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী জানালেন ডেঙ্গিতে মৃত্যুর সংখ্যা ১১। তথ্যের এত ফারাক কেন? এ প্রশ্নের অবশ্য উত্তর নেই রাজ্যের স্বাস্থ্য আধিকারিকদের কাছে। 

স্বাস্থ্য ভবনের তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যের প্রায় ৮০ হাজার মানুষ চলতি বছরে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। পুজোর পরে ডেঙ্গির গ্রাফ মারাত্মক বাড়তে শুরু করে। প্রতি সপ্তাহে কলকাতা, উত্তর চব্বিশ পরগনা, জলপাইগুড়ির মতো জেলাগুলোতে ১০ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হন। কিন্তু এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কিছুই বলেননি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, শীত আসছে, ডেঙ্গি নিয়ে আর উদ্বেগ বিশেষ নেই। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, মুখ্যমন্ত্রীর এই আশ্বাস পরের বছরের জন্য আরও বড় বিপদ তৈরি করবে না তো? 

আরও পড়ুন: 'ডেঙ্গি মোকাবিলায় ব্যর্থ রাজ্য', হাইকোর্টে দায়ের হল জনস্বার্থ মামলা

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গির মতো মশাবাহিত সংক্রমক রোগের মোকাবিলা বছরভর করতে হবে। তাই শীতে ডেঙ্গির দাপট কিছুটা কমলেও প্রশাসনের কাজ থামালে চলবে না। ডেঙ্গি মোকাবিলায় এ বছরে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল পুর কর্মীর অভাব। নজরদারি করার জন্য পর্যাপ্ত পুর কর্মী ছিল না। তাছাড়া, প্রশাসনের একাধিক বিভাগের সমন্বয়ের অভাব, একটি বড় সমস্যা। এই সমস্যাগুলোকে এড়িয়ে গেলে চলবে না। শীতের দাপটে ডেঙ্গির গ্রাফ নিম্নমুখী হলেও ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের কাজ চালিয়ে যেতে হবে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ডেঙ্গি কমার আশ্বাসে, সেই কাজে ভাটা পড়বে কিনা সে নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। 

চিকিৎসকদের মতে, ডেঙ্গির তথ্য গোপনের রোগ না সারলে রাজ্যবাসীর ডেঙ্গির থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। কারণ, ডেঙ্গির ভয়াবহতা মানুষকে বোঝাতে হলে, সচেতন করতে হলে সরকারকে স্বচ্ছ হতে হবে। ডেঙ্গি নিয়ে এই লুকোচুরির প্রবণতা থাকলে, সেই কাজ সম্ভব নয়। চিকিৎসক শারোৎদ্বত মুখোপাধ্যায় বলেন, "মানুষকে বোঝানোর আগে সরকারের বোঝা দরকার প্রত্যেক বছর রাজ্যের মানুষকে কোন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ ডেঙ্গি আক্রান্ত হচ্ছেন। অথচ, কয়েকটা কথা বলে দায় এড়াতে চাইছে প্রশাসন। ডেঙ্গি মোকাবিলার সদিচ্ছা আদৌও রাজ্য সরকারের আছে কি? " 

চিকিৎসক অরুণাচল দত্ত বলেন, "ডেঙ্গি মোকাবিলা নিয়ে সরকারের স্বচ্ছতার বড় অভাব। মানুষ ভুগছে, অথচ মানুষকে বুঝতে দেওয়া চলবে না। জানানো যাবে না। সত্যি এভাবে গোপন করা যায় না। এতে সমস্যা বাড়ে। জনস্বাস্থ্যের মতো বিষয়ে মানুষকে সতর্ক করতে সরকারের নূন্যতম স্বচ্ছতা প্রয়োজন। ডেঙ্গির ক্ষেত্রে যে রাজ্য সরকারের তা নেই, সেটা প্রমাণিত।" বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, নিজেদের আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। জল জমানো যাবে না। কোনও ভাবেই যাতে মশা জন্মাতে না পারে, সেটা সাধারণ মানুষকে দেখতে হবে। পাশপাশি পুরসভাকেও বারবার জানাতে হবে। যাতে ডেঙ্গি রোধে পুরসভা সক্রিয় থাকে, সে নিয়েও নাগরিক সমাজকেই সজাগ থাকতে হবে।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles