মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: পঞ্চায়েত ভোটের (Panchayat Elections 2023) নির্ঘণ্ট হওয়া থেকে শুরু করে শুক্রবার অর্থাৎ, ভোটের আগের সন্ধে পর্যন্ত গত ৩০ দিনে রাজ্যে ভোট--পূর্ববর্তী হিংসার বলি হয়েছিলেন ১৮ জন। ফলে, শনিবার অর্থাৎ আজ ভোটগ্রহণের দিন কী হতে চলেছে তার একটা পূর্বাভাস পাওয়া গিয়েছিল। আর সেই আশঙ্কা সত্যিও হলো।
এদিন সকাল থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভোট হিংসার (Bengal Poll Violence) খবর আসতে শুরু করে। উত্তর হোক বা দক্ষিণ— রাজ্যের সর্বত্র রক্ত ঝরেছে। বিভিন্ন প্রান্তে মৃত্যু হয়েছে। শাসক হোক বা বিরোধী— সব দল, সব রঙের কর্মী-সমর্থকরা এই হিংসার শিকার হয়েছেন। কোচবিহার থেকে বর্ধমান, উত্তর থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মালদা থেকে মুর্শিদাবাদ— বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছে মৃত্যুর খবর। আগের দিন যে সংখ্যা ১৮ ছিল, শনিবার সন্ধে পর্যন্ত সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৩। অর্থাৎ, শুক্রবার রাত থেকে শুরু করে শনিবার সন্ধে পর্যন্ত মারা গিয়েছেন ১৫ জন। গুলিবিদ্ধি হয়ে চিকিৎসাধীন অনেক। এছাড়া, বোমার ঘায়ে বা মারধরে জখমের সংখ্যা বহু।
ভোট হানাহানিতে শীর্ষে রয়েছে মুর্শিদাবাদ। সমস্যা শুরু হয়েছিল মনোনয়নের প্রথম দিন থেকেই। তবে পঞ্চায়েত ভোটের (Panchayat Elections 2023) আগের রাত থেকে পরিস্থিতি চরমে পৌঁছেছে। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার ভোটের দিন দুপুর পর্যন্ত সেই জেলায় পাঁচ জন খুন হয়েছেন। এর মধ্যে শুধুমাত্র শাসকদলেরই তিন জন কর্মী খুন হয়েছেন। এক কংগ্রেস কর্মী এবং এক জন সিপিএম সমর্থককেও খুনের অভিযোগ উঠেছে। তালিকায় দু’নম্বরে কোচবিহার। একই সময়ে এই জেলায় তিনজন খুন হয়েছেন। এর মধ্যে ২ জন বিজেপির এবং একজন তৃণমূলের।
আরও পড়ুন: নদিয়ার বুথে বোমাবাজি তৃণমূলের, জবাবে শূন্যে গুলি কেন্দ্রীয় বাহিনীর
একবার দেখে নেওয়া যাক এই ১৫ জনের মধ্যে কে কোথায় মারা গিয়েছেন (Bengal Poll Violence)—
কোচবিহার
কোচবিহার-১ নম্বর ব্লকের ফলিমারী গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বিজেপি পোলিং এজেন্ট মাধব বিশ্বাসকে গুলি করে খুন করার অভিযোগ উঠল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। বুথ কেন্দ্রে ঢুকতে যাওয়ার সময় তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়া হয়। তারপরে উত্তেজনা ছড়ালে তাঁকে গুলি করা হয়। ঘটনায় আহত হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী মায়া ভৌমিক সরকারও।
তুফানগঞ্জে তৃণমূলের বুথ চেয়ারম্যানকে খুনের অভিযোগ ঘিরে শোরগোল এলাকায়। শুক্রবার রাতে গণেশ সরকারের (৫০) রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। গণেশ কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ-২ নম্বর ব্লকের রামপুরের ৯/৬৪ নম্বর বুথের চেয়ারম্যান ছিলেন। স্থানীয় টোটো ইউনিয়নের সভাপতিও ছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে খবর।
দিনহাটা ১ নম্বর ব্লকে গুলিবিদ্ধ বিজেপি কর্মীর মৃত্যু হল দিনহাটা হাসপাতালে। মৃতের নাম চিরঞ্জিত কার্জি। শনিবার সকালে দিনহাটার কালীরপাট গ্রামে ভোট ঘিরে তুমুল অশান্তি শুরু হয়। বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা বুথে ঢুকে তাণ্ডব শুরু করে। বাধা দেওয়ায় বিজেপি কর্মীদের উপর চড়াও হয় তারা। বুথের মধ্যেই গুলি চলে। মারা যান চিরঞ্জিত। গুলিবিদ্ধ রাধিকা বর্মন নামে আরেক বিজেপি কর্মী।
দক্ষিণ দিনাজপুর
ভোট চলাকালীন বুথের মধ্যেই খুন হলেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী। শনিবার ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর দিনাজপুর জেলার গোয়ালপোখর-১ ব্লকের চাকুলিয়া থানার ২ নম্বর বিদ্যানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ভেবরা গ্রামের ১৯২ বুথে। কংগ্রেস ও তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর জখম হন মহম্মদ শাহেনশা। রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়েন তিনি। পরে, হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর।
মুর্শিদাবাদ
বেলডাঙায় ভোট (Panchayat Elections 2023) হিংসার বলি হন তৃণমূলের কর্মী বাবর আলি (৪০)। ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙা থানার অন্তর্গত কাপাসডাঙা ষষ্ঠীতলা এলাকায়। শুক্রবার সন্ধেয় বেলডাঙা কাপাসডাঙ্গা এলাকায় বাড়ির সামনে বসে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলছিলেন বাবর আলি। অভিযোগ, আচমকাই স্থানীয় কংগ্রেস নেতা শফিকুল শেখ ও মুরসালিম শেখের নেতৃত্বে কিছু দুষ্কৃতী বাবরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে শুরু করে। রক্তাক্ত অবস্থায় বাবরকে উদ্ধার করে বেলডাঙা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
রেজিনগরে তৃণমূল কর্মীকে বোমা মেরে খুন করার অভিযোগ। শনিবার সকালে রেজিনগর থানার নাজিরপুরে মৃত্যু হয়েছে ইয়াসিন শেখ নামে এক শাসকদলের কর্মীর। অভিযোগ, দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমের আঘাতে মৃত্যু হয়েছে ইয়াসিনের। নিহত ওই ব্যক্তি স্থানীয় তৃণমূল প্রার্থী কবিতা বিবির আত্মীয়। অভিযোগ, গভীর রাতে ওই এলাকায় ব্যাপক বোমাবাজি হয়। বাড়ির ছাদ থেকে বোমা ছোড়া হয়। সেই বোমা ফেটেই নিহত হন ইয়াসিন শেখ।
খড়গ্রামেও একটি ফাঁকা জমি থেকে শনিবার সকালে তৃণমূল কর্মী সাত্তারউদ্দিন শেখের দেহ উদ্ধার হয়। খড়গ্রামের রতনপুরেই মনোনয়নের প্রথম দিন খুন হন কংগ্রেস কর্মী ফুলচাঁদ শেখ। স্থানীয় সূত্রে খবর, সাত্তারউদ্দিনই সেই খুনের মূল অভিযুক্ত ছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের ধারণা, সেই খুনের বদলা নেওয়ার জন্যই শনিবার ভোট শুরুর ঠিক আগে তৃণমূল কর্মী সাত্তারুদ্দিনকে খুন করা হয়েছে।
বহরমপুরের নওদাতে কংগ্রেস কর্মীকে মারধর বুথের সামনে। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
লালগোলায় বুথে সংঘর্ষ হয় বাম-তৃণমূলের। সেই সংঘর্ষে মৃত্যু হয় বাম সমর্থকের। একটি বুথে শাসকদলের কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে সিপিএমের। ভোট দিতে এসে সেই সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যান রওশন আলি নামে ওই সিপিএম সমর্থক। বেধড়ক মারধর করা হয় তাঁকে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় তাঁর।
মালদা
মানিকচকের গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূলের এক কর্মীকে খুনের অভিযোগ উঠেছে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। দাবি, কংগ্রেসের হামলায় নিহত হয়েছেন তৃণমূলের স্থানীয় অঞ্চল সভাপতি মহম্মদ নাসিরের কাকা শেখ মালেক। পায়ে গুলি লেগে আহত হয়েছেন নাসিরও।
নদিয়া
চাপড়ার কল্যাণদহে এক তৃণমূল কর্মীকে কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। শাসক দলের দাবি, দলবদ্ধ ভাবে ভোট দিতে যাওয়ার সময় তৃণমূল কর্মীদের উপর হামলা চালান কংগ্রেস কর্মী সমর্থকেরা। ধারালো অস্ত্র দিয়ে ওই তৃণমূল কর্মীদের উপর হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। আমজাদ হোসেন নামে এক তৃণমূল কর্মীকে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
উত্তর ২৪ পরগনা
বারাসত-১ ব্লকের কদম্বগাছিতে এক নির্দল প্রার্থীর সমর্থককে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। আবদুল্লা আলি নামে এক নির্দল প্রার্থীকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। বয়স ৪১ বছর৷ অভিযোগের আঙুল উঠেছে শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ভোটের আগের দিন রাতে তাঁর উপর হামলা চালানো হয়। গভীর রাতে তাঁকে বারাসাত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা
ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে আচমকা ছোড়া বোমার আঘাতে মৃত্যু হল এক তৃণমূল কর্মীর। শনিবার এই ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীতে। নিহতের নাম আনিসুল ওস্তাগর। তিনি স্থানীয় তৃণমূল প্রার্থীর আত্মীয় বলে জানা গিয়েছে। ওই ঘটনায় বোমা ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় নির্দল প্রার্থীর দলবলের বিরুদ্ধে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
পূর্ব বর্ধমান
কাটোয়ায় খুন হয়েছেন তৃণমূল কর্মী গৌতম রায়। অভিযোগ, সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরা এই হামলার নেপথ্যে। অভিযোগ, কাটোয়ার সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বুথের (Panchayat Elections 2023) বাইরে বার করে এনে পিটিয়ে খুন করা হয় গৌতমকে।
আউশগ্রামে তৃণমূল ও সিপিএম সংঘর্ষে এক সিপিএম কর্মী নিহত হন (Bengal Poll Violence)৷ মৃতের নাম রাজিবুল হক৷ গতকাল পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের অমরপুর পঞ্চায়েতের বিষ্ণুপুরে ভোটকর্মীদের সামনেই দুই গোষ্ঠীর বচসা শুরু হয়৷ এরপর তা মারামারিতে পৌঁছয়৷ এই ঘটনায় দু'পক্ষের চারজন আহত হয়েছেন৷
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours