কিছু খেলেই অস্বস্তি? হজম হচ্ছে না? কী বলছেন বিশেষজ্ঞ মহল?
প্রতীকী চিত্র।
তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
সকালের জলখাবার কিংবা রাতের খাবার খাওয়ার পরেই এক ধরনের অস্বস্তি। আবার অনেকের খাওয়ার ইচ্ছেই অধিকাংশ সময় থাকে না। পেটে অস্বস্তি, বমি কিংবা হজমের একাধিক সমস্যায় জেরবার অনেকেই। আর সমস্যা শুধু হজমের গোলমালেই আটকে থাকছে না। বরং, দীর্ঘদিন হজমের গোলমাল (Digestion) থাকার জেরে গ্যাস্ট্রিক, আলসার সহ নানান জটিল রোগ তৈরি হচ্ছে। ফলে, ভোগান্তি আরও বাড়ছে। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, কয়েকটি ঘরোয়া উপাদান এবং কিছু সহজ উপায় মেনে খাদ্যাভ্যাস তৈরি করলেই এই ধরনের লাগাতার সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে। খিদে বাড়বে, হজম হবে সহজেই, আর সুস্থ জীবনযাপন সম্ভব হবে। কিন্তু জীবনযাপনের কোন বদল হজমের গোলমাল কমিয়ে দেবে?
পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়া
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, হজমের সমস্যায় ভুক্তভোগীদের অন্যতম কারণ জল পর্যাপ্ত না খাওয়ার অভ্যাস। সকালে খালি পেটে এক গ্লাস জল খেলে অন্ত্র ভালো থাকে। পাকস্থলীর কার্যক্ষমতা বাড়ে। পাশপাশি সারাদিনে অন্তত ৪-৫ লিটার জল একজন প্রাপ্তবয়স্কের খাওয়া উচিত। দেহে পর্যাপ্ত জলের জোগান থাকলেই হজমের সমস্যা কমবে। জল পাকস্থলীকে ভালো রাখে। ক্ষতিকারক অ্যাসিড তৈরি আটকায়। তাই হজম শক্তি বাড়ে।
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, আধুনিক জীবনে হজমের সমস্যা তৈরি হওয়ার অন্যতম কারণ হল খাবার সময়ের মধ্যে ব্যবধান বাড়ছে। তাঁরা জানাচ্ছেন, তরুণ প্রজন্মের বড় অংশের খাবার খাওয়ার সময় ঠিক নেই। অনেকেই জলখাবার খান না। অনেক দেরিতে ঘুম থেকে ওঠেন। সরাসরি লাঞ্চ করেন। যা একেবারেই স্বাস্থ্যকর নয়। আবার অনেকেই ভারী ব্রেকফাস্ট করেন। লাঞ্চ একদম বাদ দেন। আবার ডিনার করেন। এই দীর্ঘ সময়ের ব্যবধান একেবারেই অস্বাস্থ্যকর। সকালের জলখাবার, দুপুরের খাবার আবার বিকেলে হালকা খাবার খাওয়া, রাতের খাবার সময় মতো খাওয়া জরুরি। অনেকেই অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকেন। তাঁরা অনেক সময়েই রাতের খাবার অনেকটা দেরিতে খান। দীর্ঘদিন এই অভ্যাস জারি থাকলে হজমের গোলমাল দেখা দেবে। এছাড়াও গলব্লাডার স্টোন, গ্যাস্ট্রিকের (Digestion) মতো রোগের ঝুঁকিও বাড়বে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলে পাকস্থলীতে এক ধরনের অ্যাসিড তৈরি হয়। যা দেহের জন্য ক্ষতিকারক। তাই নির্দিষ্ট সময় অন্তর কিছু খাবার খাওয়া উচিত।
যোগাভ্যাস একাধিক রোগ নির্মূল করতে সক্ষম। আর তার মধ্যে অন্যতম হজমের গোলমাল। এমনটাই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞ মহল। তাঁরা জানাচ্ছেন, সকালে নিয়মিত হাঁটলে হজমের ক্ষমতা বাড়ে। খিদে বাড়ে। ফলে অন্ত্র সক্রিয় থাকে। এর পাশপাশি ভারী খাবার খাওয়ার পরেই বিশ্রাম নেওয়া একেবারেই স্বাস্থ্যকর নয় বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, দুপুরে কিংবা রাতে ভারী খাবার খাওয়ার পর কিছুক্ষণ বজ্রাসনের মতো কিছু যোগাভ্যাস করা জরুরি। এতে হজম শক্তি বাড়ে। সুস্থ থাকা যায়।
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, তরুণ প্রজন্মের একাংশ রাতের ডিনার অধিকাংশ সময় রেস্তোরাঁয় করেন। কিংবা বাইরের খাবার আনিয়ে খান। আর এই অভ্যাস বিপদ বাড়াচ্ছে। তাঁরা জানাচ্ছেন, রাতে বিশেষত বেশি রাতে অতিরিক্ত তেলমশলা জাতীয় খাবার খাওয়া একেবারেই অস্বাস্থ্যকর। এর জেরে অন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হজমের গোলমাল হয়। রাতে একেবারেই হালকা খাবার খাওয়া উচিত। এতে হজম দ্রুত হয়। কিন্তু কোন ঘরোয়া খাবার নিয়মিত খেলে হজম শক্তি বাড়বে?
নিয়মিত প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার খেলে হজম শক্তি বাড়বে। এমনই জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, সকালের জলখাবারে কলা কিংবা আপেলের মতো ফল থাকা জরুরি। কারণ এগুলোতে প্রচুর প্রোবায়োটিক রয়েছে। এছাড়াও ভারী খাবার খাওয়ার পরে টক দই খাওয়া জরুরি। কারণ টক দইয়ে থাকে উপকারী ব্যাকটেরিয়া। এগুলো অন্ত্রে গিয়ে হজম ক্ষমতা বাড়ায়। পাকস্থলী ও লিভার সুস্থ রাখে।
দারুচিনি হজম শক্তি বাড়াতে এবং হজমের সমস্যা কমাতে বিশেষ উপকারী। এমনই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞ মহল। তাঁরা জানাচ্ছেন, দারুচিনিকে প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড বলা হয়। এই মশলা রান্নায় ব্যবহার করলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়। যাঁরা খুব হজমের সমস্যায় ভোগেন, তাঁরা চায়ে এক টুকরো দারুচিনি দিয়ে নিয়মিত খেলে বিশেষ উপকার পাবেন (Digestion)।
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ফাইবার হজমের সমস্যা কমাতে বিশেষ সাহায্য করে। তাই নিয়মিত যে কোনও রকমের ডাল, নাশপাতির মতো ফল কিংবা আটার তৈরি রুটি খাওয়া জরুরি। এই ধরনের খাবার নিয়মিত খেলে অন্ত্র সুস্থ থাকে। ফলে হজমের গোলমাল কমে।
অনেকেই গ্যাসের সমস্যায় ভোগেন। তাঁদের জন্য আদা বিশেষ উপকারী বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, সকালে একটুকরো কাঁচা আদা খেতে পারলে গ্যাসের সমস্যা কমে। এমনকি গ্যাস্ট্রিকের ঝুঁকিও কমে। তবে যাঁরা কাঁচা আদা চিবিয়ে খেতে পারেন না, তাঁরা তরকারিতে নিয়মিত আদা বাটা ব্যবহার করুন। এমনই পরামর্শ বিশেষজ্ঞ মহলের।
DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।